আলমাস হোসেনঃ ঢাকা জেলা প্রতিনিধি
ঢাকার আশুলিয়ায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের জন্য তৈরি অরক্ষিত গর্তে জমে থাকা পানিতে পড়ে ফাতেমা নামের চার বছরের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে পলাতক ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। খবর পেয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। রোববার (০২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব পানধোয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন রোজ কন্সট্রাকশন হোমস লিমিটেড নামের একটি নির্মাণাধীন ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশুর নাম ফাতেমা আক্তার (৪)। শিশুটি পানধোয়া এলাকার মৃত ফিরোজ আলমের মেয়ে। মা আসমা বেগমের সঙ্গে পানধোয়া এলাকায় নানা নুরুল ইসলামের বাড়িতে বসবাস করত ফাতেমা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফাতেমা ছিল ছোট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটির ছাদ ঢালাই হলেও চারপাশ খোলা। লিফটের জন্য গভীর গর্ত খোঁড়া হলেও সেটি অরক্ষিত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ওই গর্তে পানি জমেছিল। আজ ফাতেমা নামের ওই শিশুটিও ভবনের নিচে খেলা করছিল। ফাতেমা হঠাৎ অসাবধানতাবশত ওই গর্তের মধ্যে পড়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজনের চিৎকারে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ফাতেমার খালা নূপুর আক্তার বলেন, হাউজিং কোম্পানির লোকজন কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই অনেক দিন ধরে ওই ভবনটা নির্মাণ করছে। রাস্তার মধ্যে যত্রতত্র তারা রড, লোহা, পেরেক এসব ফেলে রেখে নির্মাণকাজ করে আসছে। সকালে ফাতেমাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। আমাদের বাড়ির সামনে নির্মাণাধীন ভবনে খুঁজতে গিয়ে দেখি লিফট হাউসে ফাতেমার জুতা দেখা যায়, তখন লোক নামিয়ে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করি। অরক্ষিত ওই হাউজে খেলতে গিয়ে এর আগেও চারজন শিশু পড়ে আহত হয়েছিল। অনেকবার রিয়েলএস্টেট কোম্পানির লোকজনকে জানালেও বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেয়নি। তাঁদের গাফিলতির কারণেই ফাতেমার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তিনি ভবন মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ফাতেমার মরদেহ পাশে নিয়ে মা আসমা বেগম বিলাপ করছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে বারবার বলছিলেন, আমার ফাতেমাকে ফিরিয়ে দে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। নির্মাণধীন ভবনের লিফটের হাউজে পানি জমেছিল। হাউজের পানিতে ডুবেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি ভবনটি রোজ কনস্ট্রাকশন হোমস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছে। তবে মালিক পক্ষের কাউকে এখনো পাইনি।